SAIFUL MUNNA - Bangla Summary, Handnotes

ইফতারী প্রথা - পরিচিতি - বর্তমান - প্রতিকার। ‍| saiful munna

ইফতারী প্রথা - পরিচিতি - বর্তমান - cÖwZKvi


ইফতারী প্রথা - পরিচিতি,ইফতারী প্রথা কী?
ইফতারী প্রথা জুলুম কেনো?


ইফতারী প্রথা কী?

বাংলাদেশের সিলেট এবং আশেপাশের অঞ্চলে প্রচলিত একটি প্রথা হচ্ছে ইফতারি প্রথা এটি মুসলিম সম্প্রদায়, রমযান মাস এবং বিবাহ সম্পর্কের সাথে সম্পর্কিত

রমযান মাস আসার পর নতুন বিবাহিত কনের বাড়ি থেকে বরের বাড়িতে গাড়ি বোঝাই করে ইফতারী সামগ্রী পাঠানো হয় বিয়ের আট-দশ বছর পর্যন্ত মেয়ের পরিবার এরকম উপহার পাঠাতে বাধ্য থাকে কোনো কোনো পরিবারে বর-কনে বৃদ্ধ হওয়ার পরেও ইফতারী দেয়া অব্যাহত থাকে তাদের ছেলেমেয়েরা নানার বাড়ি থেকে ইফতারী গ্রহন করে

 

ইফতারী প্রথার উৎপত্তিঃ

 

ধারণা করা যায়, যৌতুক প্রথা যেভাবে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, সেভাবে ইফতারীও একটি ছদ্মবেশী যৌতুক হিসেবে চলে আসছে অনেক আগ থেকে বিয়ের সময় বরপক্ষ যেরকম জিনিসপত্র / টাকাপয়সা দাবি করত,তেমনি রমযান মাস আসলে তাদের দাবি থাকত গাড়িভর্তি খাবার পাঠানোর

তাছাড়া, ধর্মীয় দিক বিবেচনা করলে, প্রথমে অন্যকে ইফতার করানোর সুন্নত পালন করত গিয়ে হয়ত একজন আরেকজনকে ইফতারী দিত একসময় তা শুধু মেয়েপক্ষের কাজ হয়ে দাঁড়ায় তারপর সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে তা গাড়িভর্তি যৌতুকে পরিণত হয়

 

ইফতারী প্রথার ভয়াবহ রুপঃ

 

বর্তমান সময়ে ইফতারী প্রথা সমাজের একটি ভয়াবহ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে মেয়েপক্ষ বাধ্য থাকে বস্তাভর্তী খাবার ছেলের বাড়িতে পাঠানোর জন্য ইফতারি না দিলে বিবাহিত মেয়েকে শাশুড়ি, ননদ, শ্বশুর,  স্বামীর কাছ থেকে প্রচণ্ড মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় স্বামীর বাড়িতে বসবাস তার জন্য দোযখের মত হয়ে উঠে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কনেকে শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে হয় অনেক মেয়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্বহত্যার পথ বেছে নেয় আবার ইফতারী আসার পর তা ননদ, শাশুড়ির মন মত না হলে তার চরম কৈফিয়ত দিতে হয় ছেলের বউকে ইফতারী নিয়ে অনেক সময় বৈবাহিক সম্পর্কে টানাপোড়ন সৃষ্টি হয়

 

ইফতারী প্রথা জুলুম কেনো?

 

ইফতারী শুধু মেয়ের পরিবার থেকে দেয়া হয় ছেলের পরিবার তা ভোগ করে ছেলেপক্ষ কখনোই মেয়ের পরিবারকে ইফতারী দেয় না

মেয়েপক্ষ ইফতারী দিতে বাধ্য থাকে যদি না দেয় তাহলে মেয়ে‡K স্বামীর বাড়িতে চরম মানসিক নির্যাতন করা হয় অনেক ক্ষেত্রে তা শারীরিক নির্যাতন পর্যন্ত গড়ায়

মেয়ের অভিভাবক যেকোনভাবে টাকা সংগ্রহ করে ইফতারী দেয়ার জন্য টাকা না থাকলে অন্যের কাছ থেকে ঋণ করে ইফতারী দেয় মেয়ের মুখ রক্ষার জন্য

ইফতারী তৈরী করার জন্য মেয়ের বাড়ির মহিলারা রোজা রেখে চরম অনিচ্ছা সত্ত্বেও সারাদিন কাজ করেন একটিই কারণ, মেয়ের মুখ রক্ষা করতে হবে

যৌতুকের একটি অংশ হচ্ছে ইফতারি যৌতুক যেরকম জুলুম, তেমনি ইফতারীও একটি জুলুম

ছেলেপক্ষ মনে করে ইফতারী পাওয়া তাদের একটি অধিকার তাই যেকোনভাবে তারা ইফতারী আদায় করবে যা সামাজিক সমতার লঙ্ঘণ

 

ধনী,  মধ্যবিত্ত গরিব পরিবারে ইফতারী প্রথাঃ

 

ধনী বা সামর্থবান পরিবারগুলোর কাছে ইফতারী একটি ফ্যাশনের মত অনেকে রীতি রক্ষার জন্য বা খুশি মনে ইফতারী দেয়

মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য ইফতারী একটি অশান্তির বিষয় অনেক কষ্ট করে ইফতারীর খরচ সংগ্রহ করতে হয় পরিবারকে না দেয়া পর্যন্ত মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে মানসিক চাপের মধ্যে রাখা হয় মনে মনে হাজারবার গালি দিয়ে মুখে হাসি নিয়ে মেয়ের পরিবার যায় ইফতারী নিয়ে ছেলের বাড়ি

গরিব পরিবারগুলোর জন্য ইফতারী হচ্ছে একটি রক্তচোষা অভিশাপের মত জোক যেকরম রক্ত চোষে খায়, তেমনি ইফতারী গরিবের শান্তি চোষে নেয় নিজের সবকিছু উপেক্ষা করে, খেয়ে না খেয়ে মেয়ের অভিভাবক ইফতারীর জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন ইফতারীতে কিছু কমবেশ হয়ে গেলে ছেলের বাড়ি থেকে বিশ্রী কথাবার্তা শুনতে হয় তাদেরকে ইফতারী না দিলে বিবাহ সম্পর্ক টিকবে কিনা সেটা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দেয় অনেক সময় মেয়েকে শারীরিক নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়

 

ইফতারী প্রথা রোধে আমাদের করণীয়ঃ

 

যত দিন যাচ্ছে সর্বনাশা প্রথাটি সমাজে প্রকট রুপ ধারণ করছে আমাদের সবার উচিত এর বিরুদ্ধে এখনই রুখে দাঁড়ানো আমাদের পুরুষদের সবাইকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আমরা বিয়ের পর স্ত্রীর বাড়ি থেকে ইফতারী আনব না নিজেদের পরিবারে এটির বিরুদ্ধে দাঁড়াব

 

শিক্ষিত শ্রেণী আলেমসমাজের ভূমিকাঃ

 

সমাজের জঘণ্য ইফতারী প্রথার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারে শিক্ষিত সমাজ এবং আলেম সমাজ শিক্ষিতরা সমাজের মানুষকে এর মারাত্মক ফলাফল সম্পর্কে বোঝাতে পারে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যাবহার করে এর নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে প্রচার প্রচারণা চালাতে পারে

এটি যেহেতু ধর্মীয় বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত, তাই আলেম সমাজ এর বিরুদ্ধে বক্তব্য বিবৃতি প্রদান করলে সাধারণ মানুষ তা বেশি মেনে চল‡e অনেক আলেম রয়েছেন, যারা এই জুলুম ইফতারী প্রথাকে হারাম বলে ঘোষণা করেছেন এবং বিভিন্নভাবে মানুষকে এর কুফল বোঝাচ্ছেন সব আলেমদের উচিত এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মানুষকে সঠিক পথ দেখানো

 

সবশেষে আশা করছি, একদিন আমাদের সমাজ জঘণ্য কুপ্রথা থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হবে

লেখকঃ - সাইফুল মুন্না।.


Comment Here:

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post