SAIFUL MUNNA - Bangla Summary, Handnotes

মৃতের বাড়িতে খাওয়ার আয়োজন - জাহিলিয়াতের একটি প্রথা | মৃত ব্যক্তির জন্য যা যা করণীয় | Saiful Munna

মৃতের বাড়িতে খাওয়ার আয়োজন, হুজুর ভাড়া করে কুরআন খতম, মৃতের বাড়িতে খানাপিনা, মৃত ব্যক্তির জন্য যা যা করণীয়, মৃতের জন্য করণীয় কী, চল্লিশা পালন করা, মৃত ব্যক্তির পক্ষে দান সদকা করা.


বাবার মৃত্যুর কয়েকদিন হলো।মুসলিম হিসেবে আমাদের এমন কোনো কাজ করা উচিত না যা কুরআন ও হাদিসের বিরুধী আমি সজ্ঞানে বলতে চাই, কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর খানাপিনার আয়োজন করা সম্পুর্ণ বিদয়াত। প্রকৃতপক্ষে ইসলামের পূর্বযুগ তথা আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে মৃত ব্যক্তির জন্য এভাবে খানা পিনার ব্যবস্থা প্রচলিত ছিলো যা এখন অবধি এই সমাজে প্রচলিত।


মৃতের বাড়িতে খাওয়ার আয়োজন
মৃতের বাড়িতে খাওয়ার আয়োজন


মৃতের বাড়িতে খাওয়ার আয়োজন : এ নিয়ে কয়েকটি দলিলঃ

 

১. ইবনে মাযাহ শরীফে সাহাবী জায়ীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজ্জালি (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে- হাদীসে মৃতের বাড়িতে খানাপিনাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

২. মুসনাদে আহমদ থেকে- “হযরত ওমর (রাঃ) মৃত্যুর পর খানাপিনার আয়োজন করাকে নিহায়াত তথা জাহেলিয়াত যুগের রসম বলেছেন

৩. বুলগুল মারামে নামক গ্রন্থে- চার মাযহাবের ইমামগণও একে নিহায়াত তথা জাহেলিয়াত যুগের রসম বলে উল্লেখ করলেন

এতো কিছুর পরেও আমাদের সমাজের মানুষের বিবেকহীন কথাবার্তা আর সমালোচনার ভয়ে আমার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শ্রদ্ধেয় বড় ভাই খানাপিনার ব্যবস্থা করলেন।মানুষও পেট ভরে খেলো।যাদের পেট টানটান হলো তাঁরা আলহামদুলিল্লাহ বললো, (যদিও শুনিনি কাউকে বলতে),যাদের হলো না তাঁরা বলতে লাগলো কি খাওয়াইলো। সেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন জাহেলি সমাজে আলো নিয়ে আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এসেছিলেন। আমরা কতটুকুই বা সেই আলো ধরে রাখতে পেরেছি আর কতটুকুই ইসলামি নিয়মকানুন মানতে পারছি তা একমাত্র আল্লাহ পাক ভালো জানেন।

 

 হুজুর ভাড়া করে কুরআন খতমঃ

আজকাল আমাদের সমাজে মৃত ব্যক্তির জন্য ভাড়া করে হুজুর এনে কুরআন খতম করানো হয়। এটাকে আমাদের সমাজে সাবিনা পাঠ ও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এই,সর্বযুগের সকল ইমাম একমত যে,মৃত ব্যক্তির জন্য ভাড়া করে হুজুর দিয়ে খতম করানে হারাম,হারাম, হারাম। পূর্ব যুগের কোনো নির্ভরযোগ্য আলেম এ ব্যাপারে অনুমতি দেননিকিন্তু পরবর্তী কিছু পেট পূজারী এটাকে টাকা রুজির ওসিলা ধরে নিয়ে ব্যবহার করছেন। তবে যদি সেই মৃত ব্যক্তি দুনিয়াতে থাকাকালীন আলেম ওলামাকে মহব্বত করে থাকেন, আর এই জন্যে উনারা সেই মহব্বতের জন্য কিছু কোরআনে কালাম তেলাওয়াত করে দুআ করেন তাহলে নিশ্চয়ই এটা পুণ্যের।এটা কল্যাণের।

দেখুন ইসলাম এমন এক জীবন-বিধান যেখানে লুকোচুরি করার সুযোগ নেই।এখানে সত্য ও গোমরাহি বলতে দুটো জিনিস বিদ্যমান। একটা অপরটির বিপরীত। হয় কুরআনের পথে না হয় তার বিরুদ্ধে। কিন্তু মধ্যে থেকে কোনো নতুন কিছু ইসলামে যোগ করার নামই বিদয়াত, আর প্রতিটি বিদয়াত গোমরাহ।

 

চল্লিশা পালন করাঃ

চল্লিশা পালন একটা কুসংস্কার প্রথা হিসেবে সমাজে প্রচলিত। মৃত্যুর চল্লিশ দিনের মধ্যে মৃতের বাড়িতে বিরাট খানাপিনার আয়োজন করাকেই চল্লিশা বলা হয়ে থাকে, যা সম্পূর্ণ বিদয়াত বলে নির্ধারিত। আমাদের সমাজে সাধারণত চল্লিশ দিনের মাথায় সমাজের উঁচু শ্রেণি থেকে শুরু করে নিচু স্তর পর্যন্ত সবাইকে পেটপুরে খাওয়ানো হয় এই দিনে। কিন্তু আমরা জানি, মৃত ব্যক্তির মারা যাওয়ার পর উনার নামে দান সদগাহ করলে এর সওয়াব মৃতের আমলনামায় যোগ হয়, কিন্তু এই চল্লিশাকে আপনারা কি সদগাহ হিসেবেই ধরে নিচ্ছেন!

 

মৃত ব্যক্তির জন্য যা যা করণীয়ঃ

 

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন, নবী (সাঃ) বলেন, "মানুষ যখন মারা যায় তখন তার সমস্ত আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমলের দরজা বন্ধ হয় না"-

(১) সাদগায়ে জারিয়াহ

(২) যদি এমন কোনো সন্তান রেখে যায়, যে আল্লাহর কাছে তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে

(৩) “যদি এমন দ্বীনি শিক্ষা অবশিষ্ট রেখে যায়, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় (সহীহ মুসলিম)

 

মৃত ব্যক্তির পক্ষে দান সদকা করাঃ

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, " জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কাছে এসে বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেছেন। তাই কোনো অছিয়ত করতে পারেন নি। আমার ধারনা, তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন, তাহলে দান সদগাহ করতেন আমি তার পক্ষ থেকে ছদকাহ করলে তিনি কি তার সাওয়াব পাবেন ?” রাসুল (সাঃ) বলেন, "হ্যা, অবশ্যই তিনি পাবেন"।(বুখারী ও মুসলিম)

 
মৃতের জন্য করণীয় কীঃ

(১) উপরিউক্ত হাদীসের আলোকে এটা নির্ভয়ে বলাই যায় যে, মৃতের পক্ষে দান সদকা করা যায়এতে এর বদৌলতে আল্লাহ উনাকে ক্ষমা করতেও পারেন।

(২) মৃতের পক্ষ হয়ে হজ্জ বা ওমরা করা হলে তা আদায় হবে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত - জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা রাসুলে কারীম (সাঃ) এর কাছে এসে বললেন, "হে রাসুল, আমার মা হজ্জ করার মানত করেছিলেন এবং তিনি তা পালন করার পূর্বেই মারা গেলেন। এখন আমি কি তার পক্ষ হয়ে হজ্জ আদায় করতে পারি? রাসুল সাঃ বললেন,  "তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে হজ্জ করো।"

(৩) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি করলে সে তা দ্বারা উপকৃত হবে। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে যে- আয়শা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) একটা শিংযুক্ত দুম্বা উপস্থিত করতে বললেন। এবং আয়েশা (রাঃ) কে ছুরি নিয়ে আসার জন্য বললেন। তিনি তাই করলেন। তারপর রাসুল (সাঃ) পশুটিকে যবেহ করার জন্য শুইয়ে দিয়ে বললেন, “বিসমিল্লাহ হে আল্লাহ, তুমি এটা মুহাম্মদ, তার বংশধর এবং সকল উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য কবুল করো

(৪) মা-বাবা শরিয়াহ সম্মত কোনো ওসিয়ত করে মারা গেলে, তা পালন করা সন্তানের দায়িত্ব।

(৫) মা-বাবার বন্ধুদের সাথে ভাল ব্যবহার করা, সন্মান করা, তাদেরকে দেখতে যাওয়া ও হাদিয়া প্রদান করা। জনৈক সাহাবী হতে বর্ণিত, ''তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, পুত্রের জন্য পিতার বন্ধুদের সাথে ভালো ব্যবহার করা সবচেয়ে পুণ্যের কাজ।

(৬) মা-বাবার আত্নীয়ের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করা। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি তার পিতার সাথে কবরে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালোবাসে,  সে যেনো পিতার মৃত্যুর পর তার ভাইদের সাথে সুসম্পর্ক রাখে

(৭) মা-বাবার ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করা সন্তানের কর্তব্য। হাদিসে বর্ণিত, "মুমিন ব্যক্তির আত্মা তার ঋণের সাথে সম্পৃক্ত থেকে যায়; যতক্ষণ না তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়।”

(৮) মা-বাবার পক্ষ থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল। সন্তান মা-বাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় মা-বাবার মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়ে যায়। এ সম্পর্কে নিচের হাদিসটি বর্ণিত যে, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ''তিনি বলেন,মৃত্যুর পর যখন কোনে বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়,তখন সে বলে, "হে আমার রব, আমিতো এতো মর্যাদার উপযুক্ত আমল করি নি। কীভাবে এ আমল আসলো?  তখন বলা হবে,  তোমার সন্তানাদি তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় এ মর্যাদা তুমি পেয়েছো।”

(৯) বাবা-মায়ের ভালো কাজগুলো জারি রাখা। কেননা, এসব ভালো কাজের সওয়াব তাদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে। হাদীসে বর্ণীত, "ভালো কাজের পথপ্রদর্শনকারী তার সম্পাদনকারীর ন্যায় সমান সওয়াব পাবে।”

(১০) কবর যিয়ারত করা। হাদিসে বলা হয়েছে, তোমরা কবর যিয়ারত কর কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

 

কথাগুলো লিখতে হলো,না লিখে উপায় নেই।

আল্লাহ সবাইকে বুঝার তৌফিক দিন।


মোঃমশিউর রহমান মহসীন

এম,সি কলেজ সিলেট।


আরও পড়ুনঃ 

ইফতারী প্রথা - পরিচিতি

 

Comment Here:

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post