SAIFUL MUNNA - Bangla Summary, Handnotes

জিসানের মাইক (গল্প--২)

জিসানের মাইক
 ক.সাইফুল মুন্না।

(১৬ নভেম্বর ২০১৮,শুক্রবার,রাত ১০.৩০-১২.১০)
----------------------
আজ জিসানের স্কুল বন্ধ।
বার্ষিক পরীক্ষার পর সাত দিনের বন্ধ।সবাই গেছে মামার বাড়ি,কেউ নানার বাড়ি।
জিসান শুধু বাড়িতে।দাঁড়িয়ে আছে মাঠে,ছাগল নিয়ে।তার তিনটি ছাগল আছে।তবে নানার বাড়ি নেই।নানা,নানি,মামা,মামি কেউ নেই।কারণ,তার জন্মের অনেক আগে নানা-নানি মারা গেছেন।বাড়িটা দখল হতে হতে এখন অস্তিত্বহীন।তারও একটা ছোট্ট কারণ;জিসানের কোন মামা নেই।
" নানা কিভাবে মারা মারা গেছেন?" মাকে বলল জিসান।
- গলায় ভাত আটকে।
কিভাবে আটকালো?
- খেতে বসে।
তারপর কী হলো?
-মারা গেলেন।
* জিসানের ছাগল নামক প্রাণীটা সম্পর্কে অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে।আর রয়েছে যন্ত্রপাতির সম্পর্কে।কারণ,এগুলো তার অবসরের বন্ধু।
আজ সে ডায়েরি লিখছে।তার মাইক প্রীতি নিয়ে।তার মাইকের প্রতি রয়েছে গভীর ভালোবাসা।
ডায়েরিটা এরকম:
.
.
আমি জিসান।
আমি একজন ছোট মানুষ।আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসের মধ্যে একটি হচ্ছে মাইক।এ যন্ত্রটা নিয়ে আমার অনেক কৌতুহল।সব যন্ত্রের মধ্যে বিদ্যুতের আগমন-নির্গমন আছে।পজিটিভে বিদ্যুৎ আসে নেগেটিভে যায়।কিন্তু মাইকে কিভাবে শব্দ তৈরি করে সেটা আমার বুঝে আসে না।আমার বন্ধুু "লক" এর সাথে একদিন কথা হলো.........
-তর আসল নাম কি রে?
"লক"
-লক আবার কী?
আমার নাম।
- কিভাবে হলো?
বিশেষ পদ্ধতিতে।
-কে দিয়েছে?
বাজারের জনগন।
- মানেটা কী?
আমার নাম।
-ব্যাখ্যা কর।
আমার মা আমার নাম রেখেছে ফয়জুল হক ওরফে ফয়জু।বাবা রেখেছে জবরুল হক ওরফে জবরু।বাজারের মানুষ জবরুল আর ফয়জুলের "ল" আর হকের "ক" রেখে সব বাদ দিয়ে দিয়েছে।তাই নাম হয়েছে "লক"।
-বাড়িতে কী ডাকে?
জবরু মেম্বার। ছোট বোন ডাকে গবরু।আমার কাছে গোবরের গন্ধ লাগে অর ডাক শুনলে।
-মেম্বার কেনো?
ঘরের সিরিয়াল।
-মানেটা কী? তর সবকিছু ত আজব দেখছি।
মা হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি,বড় আপা প্রধানমন্ত্রী,মেঝোটা পরিকল্পনা মন্ত্রী,ভাই সংস্কৃতি মন্ত্রী,ছোট বোন সরকার,আর আমি মেম্বার।

--ভাইয়ের পদটা এত ছোট দিলি কেনো? উনার ত অনেক সুনাম আছে।
হ্যা,সুনাম অনুযায়ী পদ।তিনি দিনে একশটা শব্দ উচ্চারণ করলে এর মধ্যে পঁচানব্বইটা গালি পাওয়া যাবে।এর মধ্যে আরো স্তর রয়েছে।
*** উনার গালির প্রথম স্তর হচ্ছে --রাগের মাথায় বলা শব্দ।দ্বিতীয় স্তর-- ধমক।তৃতীয় স্তর--সাধারণ গালি।চতুর্থ স্তর --বিশেষ শব্দের ব্যবহার।যা সচরাচর শুনা যায় না।পাগলরা যখন বক্তব্য দেয় তখন পরিষ্কার কিছু বিশেষ শব্দ শুনা যায়।।এটা তাই।।পদ পেলে মানুষ অনেক কিছু ভুলে যায়। উনার গালি দূর করার এটা একটা উপায়।পদ পেয়ে গালি ভুলবেন।
- মাইক সম্পর্কে তুই কি জানিস?
কী করবি?
- কিছু না।তবে এ যন্ত্রটা নিয়ে আমার অনেক আগ্রহ।
মাইক ত খুব মারাত্মক জিনিস।কোনো রকমে ভাইয়ের মুখের কাছে চলে আসলে এলাকায় হুলস্থুল পড়ে যাবে।
-উনি সুন্দর বক্তব্য দেন নাকি?
সুন্দর মানে!  বিশেষ গালি যখন শুরু করেন,তখন শিশুরা পর্যন্ত কানে আঙুল দিতে বাধ্য হয়।
- তর ভাই বাদ দে।তর কথা বল।
আমি মাইক দেখলেই আমার হার্টবিট বেড়ে যায়।ইচ্ছে হয়,ধরেই বলি.....ভা..ই..সব......
- আমার ইচ্ছে হয়, ধরেই একটা করুন সুর তুলি
গান পারিস?
-না, তবে মাইক দেখলেই গেতে ইচ্ছাে করে।কারণ,গায়করা মাইক ছাড়া কখনও গান গায় না।
রাজনীতিকেরাও না।একটা গল্প বলি।
- বল।
..... এক ব্যক্তি খুবই নরম।তিনি সবসময় নিচু গলায় কথা বলেন।কিন্তু, মাইক হাতে পাওয়া মাত্রই তিনি গরম হয়ে উঠেন।মনে হয়, দুএকটা খুন করে ফেলবেন সুযোগ পেলে।  চিৎকার করে বলেন,.....ভা...ই..সব।
একবার তিনি বক্তব্য দিতে গিয়ে মঞ্চ থেকে পড়ে গিয়েছিলেন।উনার পাজামার পিছনের দিকটা ছিঁড়ে গিয়েছিল।মঞ্চে থাকা ভি.আই.পি পরিবারের এক শিশু একটি কলম দিয়ে খোঁচা দেয় সে জায়গায়।তারপর, তুলকালাম কান্ড।
পরের দিন পত্রিকায় পড়লাম:.....
" সবজি পার্টির মহাসচিব বক্তব্যের সময় বিরোধী দলের আক্রমনের শিকার হন।দুর্বৃত্তরা তাকে প্রাণে মারার জন্য পিছনের দিকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে।এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন।বর্তমানে তিনি হাসপাতালে আই.সি.ইউ তে ভর্তি আছেন।"
এক ব্যক্তি পত্রিকা পড়ে আমাকে বললেন, " আজব ব্যাপার,এই ত দেখলাম,সে বাসায় আরাম করে বোতল খাচ্ছে।"
**** লককে আমার একটি কাহিনীও শুনালাম।যা এরকম.....
কলেজে একবার " পরীক্ষার্থীদের সমস্যা ও সমাধান" শীর্ষক অনুষ্ঠান হয়।যারাই মাইকের কাছে আসছিলেন তারাই একটি কথা বারবার বলছিলেন,"..... উপস্থিত সবাই, এই কলেজের জন্য আমি যা করেছি তা কেউ কোনদিন করেনি।"
সমস্যাও নাই,সমাধানও নাই।সবাই মিলে নিজের মহান ত্যাগের সামান্য উল্লেখ করছেন। কেউ আধা ঘন্টায়,কেউ এক ঘন্টায়।
শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে যখন বক্তব্যের জন্য যাকা হলো তখন আমি উঠে দাঁড়ালাম।মাইকের কাছে গিয়ে মনে হচ্ছিল, কিছুক্ষণ পর ফাঁসি দেয়া হবে।
কিন্তু মাইকে দুএকটা কথা বলার পর নতুন এক অনুভূতি পেলাম।সেটি গ্রহন করতে লাগলাম।
তারপর,কী বললাম জানি না।প্রায় দশ মিনিট মাইকের সামনে ছিলাম।মাঝের একটা শব্দ শুধু মনে আছে।কে একজন বললেন,....ঠি.....ক,পারবে তুমি।
পরে জানতে পারলাম,তিনি আমার বক্তব্য শুনে খুব খুশি হয়েছেন।এরপর থেকে তিনি আমাকে দেখলেই ডেকে নিয়ে কথা বলেন।তাকে প্রতিদিন দেখি দুকানে বসে আছেন, হা করে।কোনো কাস্টমার নাই।
----------
আজ আর লিখলাম না।
জিসান।
 ★ জিসান যখন ডায়েরি লিখছিল,তখন আজরাইল তার খুব কাছে ছিলেন।সেটি বুঝতে পারে সে কিছু সময় পরে।খাতা বন্ধ করে বের হয়ে সে দেখে,তার ছাগলটা মরে পড়ে আছে।মা ছাগল।
ছাগলটি বাচ্চা দেয়ার পর থেকে এক অজানা রোগে আক্রান্ত হয়।..
জিসানের খাতায় একটি বিষয় লিখা হয় নি.................খাতার উপর পড়ে থাকা কয়েকফুটা চোখের জল।

Comment Here:

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post