SAIFUL MUNNA - Bangla Summary, Handnotes

জিসানের মাথাব্যাথা

জিসানের মাথাব্যাথা
সাইফুল মুন্না।

{২৪-১২-২০১৮,সোমবার,রাত ১১.৯ মিনিট}( ঘড়ি তিন মিনিট আগে, মূল সময় ১১.৬)
*****
জিসান শুয়ে আছে।
তার মাথাব্যাথা করছে।প্রচন্ড মাথাব্যাথা।
পাশের ঘর থেকে তার মায়ের গলা শুনা যাচ্ছে।" ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষা,তার কোনো খেয়াল নেই।সারাদিন দৌড়াদৌড়ি, আর এখন নবাবী ঘুম হচ্ছে।" গলার স্বর খুব চড়া।
যদিও ফেব্রুয়ারির এখনো তিনমাস বাকি। জিসানের প্রায় সব বিষয়ই ডবল রিভিশন দেয়া।
জিসানের মাথাব্যাথা খুব নতুন নয়।বই বের করলে তার মাথায় জিমজিম একটি ব্যাথা অনুভূত হয়।ক্রমে তা বাড়তে থাকে।একসাথে চারঘন্টা ঘুম,এ ব্যাথার কার্যকরী ঔষধ।অবশ্য বই ছাড়াও এ ব্যাথার আরো কারণ আছে।যেমন,মায়ের কথা শুনলেই ব্যাথা শুরু হয়।আবার মেঘের দিন আসলে মাথায় চিমচিমে ব্যাথা হয়।এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাথা হচ্ছে মায়ের ডাকের ব্যাথা।
জিসানের মাথাব্যাথা কোনোক্রমেই কমছে না।সে দুটো বালিশ মাথায় চাপ দিয়ে শুয়ে আছে।
জিসানের পড়ার শব্দ না পেয়ে পাশের ঘর থেকে মা আসলেন। ছেলের মাথায় দুটো বালিশ দেখে তিনি বিচলিত বোধ করলেন।কাঁদো কাঁদো স্বরে বললেন, "তোকে কালকেই মুনশী পীরের কাছে নিয়ে যাব।জিনভূত আমাদেরকে ঘিরে ফেলেছে। বড় পীর দিয়ে ঘর বেড়া দেব,সে ত অনেক খরচের ব্যাপার।বড় পীর কম টাকায় কিছু করেন না।পাঁচশ টাকার কম তিনি কোনো তাবিজ দেন না।ঘর বেড়ায় ত মেলা টাকা লাগবে।আমরা গরিব মানুষ। এত টাকা পাব কোথায়! তাই,চল মুনশী পীরের কাছে যাই।তিনি জিন দিয়ে কাজ করেন।মানুষকে মাটির সাথে লাগিয়ে দিতে পারেন।ইচ্ছা করলে মেরে ফেলতে পারেন।তার সাথে তিনজন জিন থাকেন।দুইজন পুরুষ আর একজন মহিলা।"
মায়ের কথা জিসানের মোটেই ভালো লাগছে না। ব্যাথা আরও বেড়ে যাচ্ছে।
******
জিসানের ঘুম ভাঙল চার ঘন্টা পর।মাথা ব্যাথা নেই।সবকিছু তার কাছে নতুন লাগছে।ক্ষুধাও লেগেছে অনেক।বিছানা থেকে উঠে রান্নাঘরে গেল সে।ভাত প্লেটে নিয়ে খেতে লাগল।তরকারী  কী,ভালো করে দেখে নি।কারণ,তরকারীর পার্থক্য সে মোটেও বুঝে না।যা সামনে আসে তাই খায়।খাবার খাওয়ার সময় দুবার সে মায়ের আওয়ায শুনতে পেল।
" খেতে এত সময় লাগে? তাড়াতাড়ি পড়তে বসো।" জিসানের খাওয়ার রুচি কমে গেল মায়ের কথা শুনে।
*****
খাওয়ার পর টেবিলে বসে আছে জিসান।তবে তার মন পড়ে আছে খেলার মাঠে।খেলা নিয়ে জিসানের মা পূর্বেই আল্টিমেটাম দিয়ে রেখেছেন।খেলায় গেলে ঠ্যাং ভাঙা হবে রাত্রে।জিসানের মায়ের এ ব্যাপারে দুটো চরম যুক্তি রয়েছে।১। খেলায় পাঁচ-দশ টাকা চাঁদা দিতে হয়,যা নিতান্ত অপচয় এবং অগ্রহনযোগ্য। ২।খেলায় মহল্লার কুকীর্তি ছেলেরা থাকে।এদের সাথে থাকলে ছেলে নষ্ট হতে দুদিন সময় লাগবে না।
" পড়া জোরে শোনা যায় না কেন?"কর্কশ গলায় বললেন মা।
জিসান চুপ করে আছে।
" খেলায় গলা ফাটাতে পারো।এখন বিড়ালের মত পড়ো কেন?"
জিসান অঙ্কের সূত্র লিখছে।তাই,কথা বলছে না।মাকে কিছু বলতেও পারছে না।ইদানিং সে মায়ের সামনে কথা বলতে পারছে না।তার খুব ভয় করছে।অনেক্ষণ চেয়ে থাকে,কিছু বলতে পারে না।
মা রান্নাঘরের দিকে যেতেই জিসান উধাও।কোনো রকমে ভেগে এসেছে মাঠে।এতক্ষণে খেলা শুরু হয়েছে।
"আমাকে রাখ খেলায়।" সবাইকে লক্ষ্য করে বলল জিসান।
"টাকা এনেছিস?পাঁচ টাকা।" চেচিয়ে উঠল কুম্ভির।কুম্ভির হচ্ছে খেলার সর্দার। কারণ,তার ব্যাট দিয়ে খেলা হচ্ছে।মাঠের জমিটুকুও নাকি তার এক দুরসম্পর্কের দাদার।
"পরীক্ষার সময় দিয়ে দেব টাকা, এখন রাখ খেলায়।"
" সবাই টাকা দিয়েছে। টাকা ছাড়া কেউ খেলায় নাই।
জিসানের খুব মন খারাপ হল।তার কাছে একটি কানাকড়িও নেই।মা বলেছেন,টাকা পেলে ছেলেরা নষ্ট হয়ে যায়।আর খেলায় টাকা চাঁদা দিয়েছে শুনলে মা তাকে আস্তা গিলে খাবেন।পরীক্ষার সময় পাঁচ টাকা পায় সে।বছরে তিনবার পরীক্ষা,তাই পনের টাকা পায় বছরে।
স্কুলে একবার মৌলভী স্যার জিজ্ঞেস করেছিলেন, "তোমরা কে কত টাকা আন টিফিনের জন্য।"
একজন বলল, স্যার,তিরিশ টাকা,আরেকজন পঞ্চাশ টাকা।সবচেয়ে বেশি টাকা আনে ময়না মিয়া।যার সংক্ষিপ্ত নাম 'কদু ময়না'।শরীর অস্বাভাবিক মোটা হওয়ায় সবাই কদু ডাকে।তার বাবা নাকি আমেরিকায় কিসের ব্যবসা করেন।সে তিনশ টাকা আনে।
জিসানের কথা কেউ বিশ্বাস করতে চাইল না।সে মাসে এক টাকাও আনে না।তার আরো দুই বন্ধু পনের দিন পরপর পাঁচ-দশ টাকা পায়।তারা তিনজনে মিলে একটা গ্রুপ করেছে।নাম দিয়েছে ' মুড়ি গ্রুপ'।কারণ,পাঁচ টাকা দিয়ে তারা মুড়ি ছাড়া কিছু কিনে না।এক ব্যাগ কিনে তিনজনে পেটপুরে খেতে পারে।
******
মাঠে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছে জিসান।তার মাথায় চিমচিমে ব্যাথা শুরু হচ্ছে।বাড়িতে ফিরে যাবে কিনা ভাবছে।মা হয়ত বেত নিয়ে বসে আছেন।
অবশেষে তার ধারণা ঠিক হলো না।সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পর থেকে সে বিছানায়।প্রচন্ড মাথাব্যাথায় মাঠে পড়ে গিয়েছিল সে।দুজন ধরাধরি করে বাড়ি দিয়ে গেছে।
"জিসান"- মৃদুস্বরে ডাকলেন মা।
"উ"
"ব্যাথা কমেছে?"
"না। কথা বলো না। ভাল লাগছে না।"
" তকে কাল কদমপূরী হুজুরের কাছে নিয়ে যাব।তিনি সব রোগ ভাল করতে পারেন।তর অবস্থা বেশ খারাপ।অশুভ কারো নজর পড়েছে।পড়ালেখা ছেড়ে ঘুরে বেড়াস বনে-জঙ্গলে।বাতাস লাগিয়েছিস।"
জিসানের মাথা জিমজিম করছে।ব্যাথা ক্রমে বেড়েই চলেছে। সে খুব নিচু গলায় বলল,"মা,আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলো।"
" ডাক্তার দিয়ে কী হবে? এতো অনেক খরচের ব্যাপার।পীরাকি রোগ তর।ডাক্তার দেখালে হবে না।কোনো দুশমন চালান ছেড়েছে তর উপর।পীর সাহেব তাকে কাহিল করে ছাড়বেন," তেজদ্দীপ্ত কণ্ঠে বললেন মা।
***
জিসান কথা বলতে চাচ্ছে।কিন্তু পারছে না।কেমন যেন শক্তি পাচ্ছে না।সে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে............


Comment Here:

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post