SAIFUL MUNNA - Bangla Summary, Handnotes

নৈতিকতা ও শিক্ষা - একটি আলোচনা / শিক্ষার সাথে নৈতিকতার কি সম্পর্ক আছে ?

                  
নৈতিকতা ও শিক্ষা - একটি আলোচনা
শিক্ষা ও নৈতিকতা

           শিক্ষা ও নৈতিকতা; সামঞ্জস্য-বৈরীতা / শিক্ষার সাথে নৈতিকতার কি সম্পর্ক আছে ?




            আমরা একসময় আদিম ছিলাম। সভ্যতা কি জিনিস, তা আমরা জানতাম না। তবে সেই অবস্থায়ও নৈতিকতা বলতে কিছু একটা যে আছে, এই জ্ঞান আমাদের ছিল। সময় যখন গড়াতে লাগল, আমরাও বদলাতে লাগলাম। আমাদের বস্তুগত এবং  ভাবগত; উভয় দিকেই উৎকর্ষ সাধিত হল। আমাদের নৈতিক চর্চাও বাড়তে লাগল। একসময় নৈতিকতা বিষয়টি জ্ঞানের একটা স্বতন্ত্র শাখায় রুপ নিল। এটিকে বংশ-পরম্পরায় পৌঁছে দেয়ার জন্য আমরা একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করলাম। যে জানে, সে যারা জানে না তাদেরকে জানাবে।আমরা এর নাম দিলাম 'শিক্ষা'। যখন আমরা ধর্মের সাথে পরিচিত হলাম,তখন তা পত্র-পল্লবে সুশোভিত হয়ে উঠল। ধর্ম আমাদেরকে নৈতিকতার সর্বোচ্চ সবক দিল। আমরা আমাদের ‘শিক্ষা’ নামক পদ্ধতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিলাম। গড়ে তুললাম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেই গাছের তলা থেকে রাজকীয় বিল্ডিং এ পৌঁছলাম। আমাদের নৈতিকতার শিক্ষাও এগুতে লাগল সমান তালে।

             আচ্ছা! এখন আসি আমাদের দেশের কথায়। আমাদের স্বাধীনতা পরবর্তী সময় দেশে শতকরা ষোলজন ছিলেন শিক্ষিত। আর তার প্রায় নিরানব্বই জনই ছিলেন শহরের বাসিন্দা। গ্রামে যদি কেউ দশম শ্রেণী পাস করত, তাহলে সে ছিল সোনায় সোহাগা। দশ-গ্রাম থেকে মানুষ আসত তাকে একনজর দেখার জন্য। সেই সময় যখন আমাদের সমাজ নিরক্ষরতায় হাবুডুবু খাচ্ছিল, তখন কিন্তু আমাদের নৈতিকতা বোধ ছিল প্রবল। প্রকাশ্যে অনৈতিক কাজ ত দূরের কথা, এর ধারে-কাছেও কেউ গেলে আমাদের বিবেক দাঁড়িয়ে যেত। আমাদের নিরক্ষতা সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াত না। যেমন ধরুন, রাস্তায় যদি কোন ছেলে-মেয়ে একসাথে গল্প করে হাঁটত, আমাদের পূর্বপুরুষরা এটাকে বেজায় অশুচি মনে করতেন। এর সর্বশেষ রুপ নিয়ে ভাবতেন। তাদের বাবা-মা বা পরিবারকে হুঁশিয়ার করে দিতেন। আমরা বললাম,এটা প্রাচীন ধ্যান-ধারণা।কেউ বলল,ধর্মীয় গোঁড়ামী। এটা বাদ দিতে হবে। আমরা বাহবা দিলাম। ঠিকই ত। এত কড়াকড়ি করলে কি চলবে?

        আমাদের আরেকটা প্রাচীন বৈশিষ্ট্য ছিল। ছেলে মেয়েদের জন্য আলাদা শিক্ষাব্যবস্থা। আমরা বললাম, এটা কি করে হবে? সবার অধিকার সমান। আলাদা কেন হবে? এতে ত পরিচালনারও দ্বিগুণ ঝামেলা পোহাতে হয়। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয়ও হয় দ্বিগুন। আমরা সহশিক্ষার ব্যবস্থা করলাম। সবাই বাহবা দিল। আমরা সামনে এগুলাম।

        আমরা যখন সভ্যতার একেকটি ধাপ অতিক্রম করছিলাম, আমাদের শিক্ষার ধাপও সমান তালে এগুচ্ছিল। একসময় আমরা আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক হলাম। আমাদের শিক্ষা নৈতিকতায় সীমাবদ্ধ না থেকে বহু শাখা-প্রশাখায় বিস্তৃত হল। আমরা হয়ে উঠলাম বিচক্ষণ,দূরদর্শী আর জ্ঞান-গরিমায় উজ্জীবিত।  

                আমাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোর আকার-আয়তন ছিল ছোট।  যখন আমরা মোটামুটি স্বচ্ছল হয়ে উঠলাম, আমরা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের উন্নতিতে কাজ শুরু করলাম। আমরা বুঝলাম শিক্ষার সাথে সুন্দর পরিবেশের প্রয়োজন আছে। শিক্ষা অর্জনের সময় যাতে শিক্ষার্থীরা সুন্দর প্রকৃতি দেখে দেহ-মন ভালো রাখতে পারে,  সেজন্য আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে গাছপালা,জলাশয়,ফুলবাগান ইত্যাদি দিয়ে সুশোভিত  করে তুললাম। শিক্ষার্থীরাও উপভোগ করতে লাগল। জ্ঞান-গরিমায় নিজেকে আবৃত করে প্রকৃতির নির্মল হাওয়া খেতে লাগল। আমরা বাহবা দিলাম। ভালোই ত। আমরা  ভালোই এগুচ্ছি।
শিক্ষার্থীরা একসময় একা একা বা দলবদ্ধ হয়ে প্রকৃতি উপভোগ করত। এ উপভোগ ছিল টাটকা এবং সতেজ। তারা শিক্ষা এবং প্রকৃতির মধ্যে বাস্তবিক মিল খুঁজে পেত। আমরা মহা আনন্দিত হলাম। একটা পবিত্র সমাজের চিত্র আঁকলাম চিন্তায়,চেতনায়।

            সময় যখন গড়াতে লাগল, তখন আমাদের সমাজও বদলাতে লাগল। আমরা উন্মুক্ত  গণমাধ্যম পেলাম, ডিসএন্টেনা পেলাম, ইন্টারনেটের অসীম বিচরণক্ষেত্র পেলাম। শিক্ষার্থীরা এগুলো থেকে জ্ঞান আহরণ করতে লাগল। গোগ্রাসে গিলতে লাগল সব জ্ঞান। এক সময় বইকে অতি ক্ষুদ্র মনে হল এসব অসীম জ্ঞানের এর তুলনায়।

                শিক্ষার্থীরা দেশি-বিদেশী মুভি দেশে জীবনকে বদলাতে লাগল। প্রাচীন রীতিনীতি দিয়ে আর কয়দিন চলতে হবে। বিশ্বায়নের সাথে তাল মেলাতে হবে ত। আমরা বাহবা দিলাম। ঠিকই ত।

            
শিক্ষার্থীদের প্রকৃতি উপভোগের পদ্ধতিও বদলাতে লাগল। তারা এখন প্রকৃতি দেখতে লাগল জোড়ায় জোড়ায়। এ পদ্ধতি তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করল পুরো দেশে। একসময় দেখা গেল একা একা বা বন্ধুরা মিলে প্রকৃতি উপভোগ করার পদ্ধতি বিলুপ্তপ্রায়। সব  জায়গায় ‘জোড়ায় জোড়ায়’ পদ্ধতি চালু হল। প্রকৃতি উপভোগের সময়েও ভিন্নতা দেখা গেল। প্রথমে শিক্ষার্থীরা ক্লাসের পরে ফ্রি সময়ে প্রকৃতি উপভোগ করত। এটাও প্রাচীন হয়ে গেল। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে সময়,বিকেলে,সকালে সব সময়ই প্রকৃতি উপভোগ করতে লাগল। এদের মধ্যে যারা একটু বেশি প্রকৃতি-প্রেমী,তারা সন্ধ্যার পরেও প্রকৃতির হাওয়া খেতে লাগল। ‘জোড়ায় জোড়ায়’ পদ্ধতিটা এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠল যে, যে সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে প্রকৃতি উপভোগের জন্য কোন জায়গা নেই, সেখানে শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে প্রকৃতি উপভোগ করতে লাগল। অনেকে আবার দরজা-জানালা বন্ধ করতে লাগল,যাতে নিভৃতে প্রকৃতি থেকে জ্ঞান আহরণ করতে পারে। 

        আমরা সব জায়গায় বাহবা দিলেও,এ জায়গায় বাহবা দিতে পারলাম না। আমাদের বুক ধক করে উঠল আগামীর কথা চিন্তা করে। আমাদের হাজার বছরের নৈতিকতার শিক্ষাকে আমরা গোঁড়ামী বলে ত উড়িয়ে দিতে পারি না। বিদেশীদের কার্যকলাপ হাভাতের মত গিলতে গিয়ে আমাদের পূর্বপুরুষদের নৈতিকতার পবিত্র জ্ঞানকে ত আর ডাস্টবিনে ফেলে দিতে পারি না। যে নৈতিকতার জন্য এত কিছু, সে নৈতিকতা যেখানে-সেখানে লাশ হয়ে পড়ে থাকবে, আর আমরাও হা করে তাকিয়ে থাকব, এটা কি করে হয়?

                যে ইউরোপিয়ানরা আমাদের ঘাড়ের রক্ত চুষে খেয়েছে তাদের বস্তাপঁচা সংস্কৃতি লুফে নিব,এটা কি করে হয়? যাদের সমাজে একটি নবজাতকের জন্মদাতা কে তা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়, তাদের কাছে আমরা আমাদের পবিত্র সামাজিক রীতি বিক্রি করে দেব,এটা কি জ্ঞানের কথা? আমাদের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান গুলোর পবিত্র নৈতিক স্বাতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে, এটা কি আমরা মেনে নিতে পারি?

    নিজেকে শিক্ষিত বলে পরিচয় দেয়ার দায়বদ্ধতা থেকে লিখলাম।যদি ভুল হয় ক্ষমা প্রার্থী।


                                                                     লেখক: - সাইফুল মুন্না।
সহযোগিতায়: বিরাদুর রহমান রাজা।

2 Comments

Comment Here:

  1. অনেক ভালো হয়েছে। মা শা আল্লাহ

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post